সমস্ত লেখাগুলি

স্কিন ক্যান্সার, সানস্ক্রিন ক্রিম প্রডাক্ট ও সান প্রটেকশন ফ্যাক্টর -
প্রিন্স ফার্দিনান্দ
Nov. 26, 2024 | বিজ্ঞানমনস্কতা | views:879 | likes:0 | share: 0 | comments:0

বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় ১ মিলিয়ন সংখ্যক মানুষ স্কিন ক্যান্সার এ আক্রান্ত হয় এবং Malignant melanoma নামক স্কিন ক্যান্সার এ আক্রান্ত হয়ে প্রায় ১০ জন এর মতো মারা যায়। বেশিরভাগ স্কিন ক্যান্সারই হয় সাধারণত শরীরের যেসব অংশ (মুখমণ্ডল, ঘাড়, মাথা, হাতের পিছনের অংশ) সূর্যের আলোতে উন্মুক্ত থাকে। [১] 

বেশিরভাগ স্কিন ড্যামেজের জন্য প্রধান ফ্যাক্টর হিসেবে সৌর বর্ণালিতে বিদ্যমান অতিবেগুনী রশ্মিকে দায়ী করা হয়। [২]

তরঙ্গদৈর্ঘ্যের উপর ভিত্তি করে অতিবেগুনী রশ্মি ৩ শ্রেনীর হয়ে থাকে। যথা-

১) UVA  (320 to 400 nm)

2) UVB (290 to 320 nm)

3) UVC (100 to 290 nm)


এই তিন অতিবেগুনী রশ্মির মধ্যে Ultra violate C বা UVC বায়ুমন্ডলের ওজোন স্তর দ্বারা শোষিত হয়, ফলে তা পৃথিবীতে আসতে পারে না। কিন্তু  Ultraviolate B বা UVB এবং Ultraviolet A বা UVA সহজেই ভূপৃষ্ঠে পৌঁছাতে পারে। কাজেই, UVA এবং UVB উভয়টি দ্বারাই স্কিন আক্রান্ত হতে পারে যার ফলশ্রুতিতে, sunburn, Solar keratosis, photoageing, Skin Cancer, DNA  & RNA Damage এর মতো চরম ক্ষয়ক্ষতির স্বীকার হতে হয়। [৩]

অতিবেগুনী রশ্মি দ্বারা সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতির (যেমন, Cataract) কারণে প্রতিবছর প্রায় ৩ মিলিয়ন মানুষ তাদের দৃষ্টিশক্তি হারায়। [৪]

কাজেই, ক্ষতিকর অতিবেগুনী রশ্মির প্রভাব থেকে স্কিন ও চোখকে সুরক্ষিত রাখতে একটি কার্যকর ও উচ্চ Sun Protection Factor (SPF) মান সম্বলিত সানস্ক্রিন প্রডাক্টের ব্যবহার খুবই দরকারি। তারই দ্বারাবাহিকতায় দেখা যায়, Skin Brightening প্রডাক্ট (যেমন, Sunscreen Cream বা Day Cream,  Sunscreen Lotion, Sunscreen Moischarizer, Foundation ইত্যাদি) বর্তমানে বিশেষ করে এশিয়ার মার্কেটগুলোতে খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।[5]


আমার এই স্টাডির মূল লক্ষ হলো, স্কিন ড্যামেজ ও স্কিন ক্যান্সার প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করা, মার্কেটে বিদ্যমান বিভিন্ন ব্রান্ডের প্রডাক্ট থেকে ভোক্তারা কিভাবে একটা ভালো, কার্যকর ও উৎকৃষ্টমানের Sunscreen প্রডাক্ট খুঁজে নিতে পারে তার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য ও দিকনির্দেশনা দেয়া এবং এসব প্রডাক্টের সাইড ইফেক্ট সম্পর্কে তাদেরকে অবহিত করা। 

Sun Protection Factor (SPF):

একটা সানস্ক্রিন প্রডাক্টের কার্যক্ষমতা বা ফলপ্রসূতা সাধারণত পরিমাপ করা হয় তার SPF মান দিয়ে যা In Vivo অথবা  In vitro উভয় পদ্ধতিতেই  মূল্যায়ন করা যায়। যে প্রডাক্ট এর SPF মান যতো বেশি তার কার্যক্ষমতা তত বেশি। SPF কে সাধারণত সংজ্ঞায়িত করা হয় নিম্নোক্তভাবে -

সুরক্ষিত ত্বকে (protected Skin with  sunscreen) এরিথেমা উৎপন্ন করতে অতিবেগুনি রশ্মির যে সময় লাগে তার এবং অরক্ষিত ত্বকে (Unprotected skin without sunscreen) এরিথেমা উৎপন্ন করতে অতিবেগুনী রশ্মির যে সময় লাগে তার অনুপাতকে সান প্রটেকশন ফ্যাক্টর (SPF) বলে। 

অর্থাৎ

SPF = সুরক্ষিত ত্বকে উৎপন্ন নূন্যতম এরিথেমাল ডোজ/অরক্ষিত ত্বকে উৎপন্ন নূন্যতম এরিথেমাল ডোজ 


নূন্যতম এরিথেমাল ডোজ (Minimal Erythemal Dose) কে আবার নিন্মোক্তভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয় -


"অরক্ষিত ত্বকে একটি ন্যূনতম, অনুধাবনযোগ্য এরিথেমা  তৈরি করতে পর্যাপ্ত UV আলোক বিকিরণের সর্বনিম্ন সময়ের ব্যবধান বা ডোজকে Minimal Erythemal Dose বা MED বলে।" [৬]


'এরিথেমা' হল ত্বকে সৃষ্ট একধরনের প্রতিক্রিয়া যা সংক্রমণ বা কিছু ওষুধের (যেমন, কসমেটিক ক্রিম) কারণে হতে পারে।


SPF মান নির্ণয় পদ্ধতি:

SPF Value সাধারণত In vivo ও In vitro উভয় পদ্ধতিতেই নির্ণয় করা যায়। 'In vivo' একটি ল্যাটিন শব্দ যা দ্বারা বোঝায়  "Within the living"। মানে যখন কোন রিসার্চ বা কাজ জীবন্ত প্রানীদের উপর বা জীবন্ত প্রাণীদেহের উপর সম্পন্ন করা হয় তখন তাকে বলে In vivo পদ্ধতি। 

অন্যদিকে,  ল্যাটিন শব্দ 'In vitro' দ্বারা বোঝায়  "Within the glass"। অর্থাৎ যখন কোন রিসার্চ বা কাজ জীবন্ত প্রাণীদেহের বাহিরে (যেমন, ল্যাবরেটরিতে) কাচের যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে করা হয়ে থাকে তাকে In vitro পদ্ধতি বলে। [৭]

In vivo পদ্ধতি একটি দীর্ঘ সময়সাপেক্ষ পদ্ধতি এবং আরও বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা থাকায় বর্তমানে SPF নির্ণয়ে In vitro technique খুবই জনপ্রিয়। কারণ এক্ষেত্রে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই UV-Vis spectrophotometric পদ্ধতিতে Mansur Equation ব্যবহার করে কোন নমুনার SPF মান নির্ণয় করা যায়। 

কসমেটিক পণ্যের গ্রহনযোগ্য SPF মান:

আমেরিকার  Food and drug administration (FDA) এর নতুন Requirements অনুযায়ী, সাধারণত কোনও সানস্ক্রিন পণ্যের SPF মান সর্বোচ্চ ৬০+ হওয়া উচিত তবে SPF 80+  হলেও সেটা মার্কেটিং এর জন্য অনুমোদনযোগ্য।[৮]


তবে সাধারণত SPF মান খুব বেশি বা খুব কম হওয়া উচিত নয়। কারণ, SPF মান খুব কম হলে তা ক্ষতিকর অতিবেগুনী রশ্মির প্রভাব থেকে  ত্বককে বাঁচাতে পারবে না আবার খুব বেশি হলে তার ব্যবহারে শরীরে প্রয়োজনীয় ভিটামিন-ডি সিনথেসিস প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হবে।  SPF মান ১৫ বা তার বেশি এরকম সানস্ক্রিনের সঠিক ব্যবহার প্রায় ৯৮% ভিটামিন-ডি উৎপাদন ক্ষমতা কমিয়ে দেয়।[৯]


সানস্ক্রিন এজেন্টস বা UV -Filters:

কসমেটিক প্রোডাক্ট ফর্মুলেশনে যেসব মেটেরিয়ালস বা কেমিক্যাল সানস্ক্রিন হিসেবে ব্যবহৃত হয় তাদেরকে সানস্ক্রিন এজেন্ট বা UV - Filter বলে।

UV ফিল্টার বা Sunscreen Agents:

UV Filter গুলো প্রধানত দুই ধরনের। যথা-

১) Topical Agents 

2) Systemic Agents 


Topical Argent গুলো প্রধানত দুই ধরনের। Organic ও Inorganic। Organic Agent গুলোর মধ্যে কিছু আছে যারা শুধুমাত্র UVA ফিল্টার করতে পারে এবং কিছু আছে যারা শুধুমাত্র UVB ফিল্টার করতে পারে। আবার কিছু কেমিক্যাল আছে যারা UVA ও UVB উভয়টিই ফিল্টার করতে পারে। [10]

নীচে Organic UV ফিল্টারগুলোর মধ্য থেকে সবচেয়ে বেশি কার্যকর কেমিক্যালগুলোর একটি তালিকা দেখানো হল:

UVA ফিল্টারস:

1.Benzophenones

2.Oxybenzone

3.Avobenzone or parsol

4.Mexoryl SX


UVB ফিল্টারস:

1.p-aminobenzoic aacid

2.Padimate O

3.Padimate A

4.Octyl Salycilate

5.Octyl Methoxycinnamate

6.Trolamine Salycilate 

7.Homosalate

8.Octocrylene

9.Ensulizole

Broad Band Organic UV ফিল্টারস:

1.Mexoryl XL

2.Tinosorb M

3.Tinisirb S

Inorganic UV ফিল্টারস:

1.Titanium Dioxide (TiO2)

2.Zinc Oxide (ZnO)

Dual UVA/UVB ফিল্টারস:

1.Mexoryl SX

2.Mexoryl XL

সিস্টেমিক UV filters:

1.Beta-Carotene

2.Carotenoids (Lycopene)

3.Selenium 

4.Ascorbic Acid

5.Green tea polyphenols

6.Aspirin

সাইড এফেক্ট:

সানস্ক্রিন প্রডাক্টের ব্যবহার এ যেমন উপকার আছে তেমনি এর ব্যবহার নিয়ে গবেষকদের মধ্যে বিতর্ক, উদ্ধেগ ও চ্যালেঞ্জ রয়েছে। [11]

নীচে এগুলোর কয়েকটি নিয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো-

1. এক স্টাডিতে দেখা গেছে যে, ৭ মাস ধরে SPF 15 বা তার অধিক SPF ক্ষমতাসম্পন্ন সানস্ক্রিন প্রোডাক্ট ব্যবহার করে এরকম প্রায় ২০% মানুষের স্কিনে জ্বালাপোড়া লক্ষনীয়। [12]

২.ফটো এলার্জিক কারণে সৃষ্ট চর্মরোগের জন্য উল্লেখযোগ্যভাবে দায়ী এজেন্ট হিসেবে Benzophenone, PABA, Eusolex 8020, [13] এবং Octyl Triazone [14] কে বিশেষভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। 

৩)  একটি রিভিউ স্টাডিতে ৬ ধরনের রাসায়নিক প্রজাতির কার্যক্ষমতা ও মানুষের স্কিনে তাদের নিরাপদ কিনা তা বিশ্লেষণপূর্বক একটি রিসার্চ পেপার প্রকাশিত হয়েছে।[15] সেখানে প্রধান যে বিষয়গুলো পাওয়া গেছে তা নীচে উল্লেখ করা হলো -


১)Aminobenzoates: এরা ফটোএলার্জি ও ফটোবিষক্রিয়ার মতো কারণের জন্য দায়ী হতে পারে। 

2)Benzophenones: স্কিনে ব্যবহার করার পর এরা শোষিত হয়ে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে রক্ত ও মুত্রের সাথে মিশে যেতে পারে। Benzophenone-3 খুব দ্রুতই বিপাক হয়ে যেতে পারে এবং এর বিষক্রিয়া ও উল্লেখযোগ্য। যদিও Benzophenones এর মার্কেট এক্সপেরিয়েন্স সবমিলিয়ে পজিটিভ তথাপি এটি অন্যান্য UV ফিল্টার এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি স্কিন রিঅ্যাকশন এর জন্য দায়ী। 

৩) Cinnamate গ্রুপের মধ্যে  Octyl Methoxy Cinnamate (OMC) হলো হিউম্যান স্কিনের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ UV ফিল্টার। 

৪) প্রতিষ্ঠিত মার্কেট অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে দেখা গেছে যে, Salycilate  গ্রুপের মধ্যে Octyl Salycilate ও Homosalate হলো দুর্বল UVB ফিল্টার এবং এদের টক্সিসিটিও সন্তোষজনক। 

৫) In vitro প্রদর্শন অনুযায়ী ধাতব অক্সাইডের মধ্যে টিটেনিয়াম ডাইঅক্সাইড (TiO2) কে Photogenotoxicity র জন্য দায়ী করা হলেও এটা এখন অবধি  একটা বিতর্কের বিষয় কারণ, In vivo পদ্ধতিতে তার বিপরীত প্রভাব  পর্যবেক্ষন করা গেছে। 


৬) প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী Ensulizole ও Octocrylene হিউম্যান স্কিনের জন্য নিরাপদ। 


ভিটামিন-ডি সিনথেসিস:

ক্ষতিকর অতিবেগুনী রশ্মি DNA ড্যামেজের জন্য দায়ী যা স্কিন ক্যান্সার এ রুপ নিতে পারে, কিন্তু এই অতিবেগুনী বর্ণালির একই অংশ আবার ভিটামিন-ডি ফটোসিন্থেসিস এর  জন্য দরকারী। প্রায় ৯০% সংশ্লেষিত ভিটামিন-ডি সরাসরি সূর্যালোক থেকে উৎপন্ন হয়। [16]

কাজেই সূর্যালোক Avoid ও  Exposure  এর মধ্যে একটা যথাযথ ব্যালেন্স বজায় রাখা দরকার। 

Endocrinologist, ডার্মাটোলজিস্ট ও পুষ্টিবিদদের প্রস্তাবনা অনুযায়ী, সপ্তাহে প্রায় ২ থেকে ৩ বার ৫-১০ মিনিটের মতো শরীরে (বিশেষ করে, মুখমণ্ডল, ঘাড়, মাথা ও হাতের পেছনের অংশ) সূর্যালোক মাখানো উচিত। [17]


রেফারেন্স:

[1].  Dutra E.A, Oliveira D.A.G.C., E.R.M.Kedor-Hackman,Santoro M.I.R.M.  Determination of sun protection factor (SPF) of sunscreens by ultraviolet spectrophotometry. Bra.J.Pharm.Sci.40,31(2004)

[2]  T.Amnuaikit, P. Boonme. Formulation and characterization of sunscreen creams with synergistic efficiency on SPF by combinatiin of UV filters. Journal of Applied pharmaceutical science, Vol.3pp.01-005, August, 2013.

[3]  T.Amnuaikit, P. Boonme. Formulation and characterization of sunscreen creams with synergistic efficiency on SPF by combinatiin of UV filters. Journal of Applied pharmaceutical science,Vol.3pp. 01-005, August, 2013.

[৪]  Young RW.The family of sunlight-related eye diseases.Optom Vis Sci 1994;71:125-44.

[5]  Boonme P, Ammuaikit T. Effect of cream formulas on SPF values of sunscreen creams containing bemotrizinol and titanium Dioxide as the actives. Isan J Pharm Sci 2013; 9(1):128

[6]  Wood, C, ; MURPHY, E. Sunscreens efficacy. Glob. Cosmet. Ind.,Duluth,v.167,p.38-44, 2000.

[7]  https: //www.healthline.health/in-vivo-vs-in-vitro 

[8]  https: //www.fda.gov/drugs/understanding-over-counter- medicines/questions-and-answers-fda-posts-deemed-final-order-and-proposed-order-over-counter-sunscreen

[9]  Holick MF. Sunlight and vitamin D for bone health and prevention of autoimmune diseases, cancers and cardiovascular disease. Am J Clin Nutr 2004; 80(6 suppl): 1678S-88S.

[10]   S.Gonzalez et al. The Latest on skin photoptotection.Clinics in Dermatology (2008),26, 614-626.

[11]   S.Gonzalez et al. The Latest on skin photoptotection.Clinics in Dermatology (2008),26, 614-626.

[12]  Foley P, Nixon R, Marks R, et al. The frequency of reactions to sunscreens: results of a longitudinal population -based study on the regular use of sunscreen in Australia. Br J Dermatol 1993;128:512-8.

[13]   Bryden AM, Mosely H, Ibbotson SH, et al.Photopatch testing of 1155 patients:results of the U.K. multicenter photopatch dtudy gtoup.Br J Dermatol 2006;155:737-47.

[14]   Darvay A, White IR, Rycroft RJ, et al.Photoallergic contact dermatitis is uncommon. Br J Dermatol 2001;145:597-601.

[15]   Nash JF. Human safety and efficacy of ultraviolet filters and sunscreen products. Dermatol Clin 2006;24:35-51.

[16]   Holick MF. Vitamin-D: a Millennium perspective. J Cell Boichem 2003;88:296-307.

[17]   Holick MF. Sunlight and vitamin D for bone health and prevention of autoimmune diseases, cancers and cardiovascular disease. Am J Clin

Nutr 2004; 80(6 suppl): 1678S-88S.

বিজ্ঞানীরা কি জ্বিন বা শয়তানের অস্তিত্ব প্রমাণ করতে পেরেছে? -
প্রিন্স ফার্দিনান্দ
Nov. 25, 2024 | ধর্ম | views:280 | likes:0 | share: 0 | comments:0

(পর্ব-১)

উত্তর: এই প্রশ্নটা প্রায়ই মুমিনদের কাছ থেকে শোনা যায়। আমি নিজেও অফলাইনে বহু মুমিনের সাথে এই বিষয়টা নিয়ে বিতর্ক করেছি যাদের মধ্যে কেউ কেউ আবার বিজ্ঞানে উচ্চতর ডিগ্রিধারী। তাই এই প্রশ্নটার একটা বিশ্নেষনমূলক উত্তর লেখার তাগিদ অনুভব করছি। এই লেখাটাতে আমি বিজ্ঞানের প্রতিষ্ঠিত তত্ত্ব ও সূত্রসমূহের আলোকে জিনের অস্তিত্ব/অনস্তিত্বের ব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা করবো। লেখাটাকে দুটি অংশে ভাগ করে সাজানো হয়েছে। প্রথম অংশে আমরা কোরান, হাদিস ও তাফসিরসমূহের আলোকে জিনদের পরিচয়, দৈহিক গঠন,খাদ্যাভ্যাস ও বাসস্থান সম্পর্কে জানবো এবং দ্বিতীয় অংশে জিনদের অস্তিত্ব অনস্তিত্বের বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ নিয়ে আলোচনা করবো । তাহলে চলুন শুরু করা যাক -

প্রথম অংশঃ    

১) জিনদের পরিচয় ও সৃষ্টির ইতিহাসঃ 

কোরান, হাদিস ও তাফসির গ্রন্থসমূহ অধ্যয়নের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি যে, আল্লাহ পৃথিবীতে মানুষকে (আদমকে) সৃষ্টি করার আগে জ্বিন নামক একটা জাতিকে সৃষ্টি করেছিলেন যারা আগুনের তৈরি। আদমকে সৃষ্টির বহু আগে তারা পৃথিবীতে বসবাস করতো এবং আল্লাহর ইবাদাত করতো। একসময় তারা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করে এবং রক্তপাত ঘটায়। তখন আল্লাহ ফেরেশতাদের একটি বাহিনী  তাদের নিকট প্রেরণ করে। তারা সেই জিনদের কতককে হত্যা করে এবং কতককে পৃথিবী থেকে তাড়িয়ে বিভিন্ন দ্বীপে নির্বাসন দেয় কিন্তু জিনদের প্রধান নেতা ইবলিশকে কয়েকজন ফেরেশতারা বন্দী করে আকাশে নিয়ে যায়। সেখানে সে আল্লাহর ইবাদাত বন্দেগী করতে করতে  নিজেকে এতই উচ্চস্তরে নিয়ে যায় যে, চারডানা বিশিষ্ট ফেরেশতাদের মধ্যে অধ্যবসায়, জ্ঞান , মর্যাদা ও সম্মানের দিক থেকে সে সকলের সেরা হয়ে ওঠে । তাকে জান্নাতসমূহের (স্বর্গ) রক্ষণাবেক্ষণ এবং নিম্ন আকাশ ও পৃথিবীর উপর কর্তৃত্ব দেওয়া হয়। অর্থাৎ আকাশ ও পৃথিবীর মধ্যবর্তী  সবকিছু সে নিয়ন্ত্রণ করতো। 

তারপর আল্লাহ যখন পৃথিবীতে আদমকে সৃষ্টি করার সংকল্প করলেন এবং মাটি দ্বারা তার দেহাবয়ব তৈরি করলেন তখন জিনদের প্রধান এবং তাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ইবাদতকারী আযাযীল বা ইবলিশ তার চারদিকে ঘুরতে শুরু করে। যখন সে দেখতে পেল যে এটি একটি শূন্যগর্ভ, মূর্তি তখন সে আঁচ করতে পারলো যে, এটি এমন একটি দেহাবয়ব যার আত্মসংযম থাকবে না। তখন সে বললো যদি তোমার উপর আমাকে ক্ষমতা দেওয়া হয়, তাহলে আমি অবশ্যই তোমাকে ধ্বংস করবো। আর যদি আমার উপর তোমার ক্ষমতা দেওয়া হয় তাহলে আমি অবশ্যই তোমার অবাধ্যতা করবো। 

তারপর যখন আল্লাহ আদমের মধ্যে তাঁর রুহের (প্রাণ বা আত্মা) সঞ্চার করলেন এবং তাকে সিজদাহ্ করার জন্য ফেরেশতাগনকে আদেশ দিলেন, তখন প্রবল হিংসাবশে ইবলিশ তাঁকে সিজদাহ্ করা থেকে বিরত থাকে এবং বলে, আমি তার চাইতে উত্তম। আমাকে তুমি আগুন থেকে সৃষ্টি করেছ আর তাকে সৃষ্টি করেছ কাদামাটি থেকে। এভাবে ইবলিশ আল্লাহর আদেশ অমান্য করে তার প্রতিপালকের বিরুদ্ধে আপত্তি তোলে। সে ভুল যুক্তি প্রদর্শন করে তার প্রতিপালকের (আল্লাহর) রহমত থেকে দূরে সরে যায় এবং তার সমস্ত মর্যাদা যা সে ইবাদত বন্দেগী করে অর্জন করেছিল, তা থেকে বিচ্যুত হয়। 

অবশেষে ইবলিশকে উর্ধ্বজগত থেকে নামিয়ে দেয়া হয় এবং সেখানে কোনরকম বাস করতে পারে এতটুকু স্থানও তার জন্য হারাম করে দেয়া হয়। 

অগত্যা সে অপদস্ত লাঞ্চিত ধিকৃত ও বিতাড়িত অবস্থায় পৃথিবীতে নেমে আসে এবং তার অনুসারী অন্যান্য জিনদেরকে (যাদেরকে শয়তান বলা হয়) নিয়ে আদম সন্তানদেরকে বিভ্রান্ত করার জন্য সকল পথে ও ঘাঁটিতে সর্বশক্তি নিয়োগ করে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। উল্লেখ্য যে, পাপাচারে লিপ্ত হওয়ার পূর্বে ইবলিশের নাম ছিল আযাযীল। আযাযীল ফেরেশতাদের মতই ছিলো বটে। তবে সে ফেরেশতা জাতিভুক্ত ছিল না। কারণ সে হল আগুনের সৃষ্টি আর ফেরেশতারা নূরের (আলোর) তৈরী।

২) জিনদের অাকৃতি ও গঠনঃ

কোরান এবং হাদিস অনুসারে, 

জিনদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে নির্ধুম (ধোঁয়া বিহীন) অগ্নিশিখা হতে। তারা মানুষের আকার ধারণ করতে পারে এবং মানুষের মত কথা বলতে পারে ও শুনতে পারে। এরা মানুষ ছাড়াও অন্যান্য প্রাণীর আকার ধারণ করতে পারে বলে হাদীসে বলা হয়েছে। 

৩) জিনদের খাদ্যাভ্যাস ও বাসস্থানঃ

জিনরা আদম সন্তানদের মতই পানাহার, বংশবিস্তার ও অন্যান্য প্রাকৃতিক প্রয়োজন পূরণ করে থাকে।  

আল্লাহর নামে জবাইকৃত পশুর হাড়-হাড্ডিই হলো জিনদের খাবার। এছাড়াও মানুষের ফেলে উচ্ছিষ্ট, শুকনো হাড়, গোবর এসমস্তই জিনদের খাবার। 

জিনরা সাধারণত মানুষের বসবাসের স্থানে থাকে না। তারা মানুষের পরিত্যক্ত স্থানে থাকতে পছন্দ করে। তাদের অধিকাংশই মানুষের কাছ থেকে দুরে নির্জন এলাকায় বসবাস করে। তবে কিছু প্রজাতির জ্বীন মানুষের সাথে লোকালয়ে থাকে । এক হাদিস থেকে জানা যায়, জ্বীনেরা নোংরা ও গন্ধময় জায়গায় থাকতে পছন্দ করে, যেখানে মানুষরা ময়লা এবং খাবারের উচ্ছিষ্ট অংশ ফেলে রাখে। পায়খানা এবং প্রস্রাব করার জায়গাগুলোতে জ্বীনদের অবাধ বিচরণ। 


(২)

এই অংশে আমরা বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণের আলোকে দেখানোর চেষ্টা করবো যে, কোরান - হাদিসে বর্ণিত বৈশিষ্ট্যমন্ডিত জ্বিনের অস্তিত্ব থাকা সম্ভব নাকি নয়। 

পদার্থ বিজ্ঞানের অধ্যয়ন থেকে আমরা জানি যে, এই ইউনিভার্স এ যা কিছু আছে তা হয় পদার্থ নয় শক্তি। আইনস্টাইনের ভর-শক্তির সমীকরণ (E= mc^2) হতে আমরা জানি, পদার্থ ও শক্তি পরস্পর রুপান্তরযোগ্য।

আবার বিকিরণের কোয়ান্টাম তত্ত্ব  সম্পর্কিত ম্যাক্স প্ল্যাংকের সমীকরণ 

(E= nhf) থেকে আমরা জানি, শক্তি বা বিকিরণ হল কতগুলো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্যাকেটের সমষ্টি। শক্তির এই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশ বা প্যাকেটগুলিকে বলা হয় কোয়ান্টা বা ফোটন। আমাদের এই ইউনিভার্সে বিদ্যমান বিলিয়ন বিলিয়ন গ্যালাক্সি, ব্ল্যাকহোল, গ্রহ, নক্ষত্র, উপগ্রহ, ধূমকেতু, উল্কাপিণ্ড ও অন্যান্য জোতিষ্কসহ যা কিছু আছে তার সবই হল ভর-শক্তি। অর্থাৎ আমাদের এই বস্তুবাদী মহাবিশ্বে ভরশক্তির বাহিরে কিছুই নেই। আমাদের পৃথিবী, এর সাগর, মহাসাগর, প্রান্তর,  নদ, নদী, গাছপালা, মানুষ ও অন্যান্য  প্রাণীসহ যা কিছু আছে তার সবই আসলে ভর-শক্তি ছাড়া কিছুই নয়। 

এবার আসি জিনের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে। কোরানে বলা হয়েছে যে, জিনদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে অগ্নি শিখা থেকে এবং হাদিসে বলা হয়েছে নির্ধুম অগ্নি শিখার কথা। তাহলে এবার আমাদের জানতে হবে অগ্নি বা আগুন এবং নির্ধুম অগ্নি বলতে আসলে কি বোঝায়। 

সংক্ষিপ্ত ও সহজ করে বলতে গেলে, আগুন হলো প্লাজমা, যাকে মাঝেমাঝে ‘পদার্থের চতুর্থ দশা’ বা ‘Fourth State of Matter’ আখ্যা দেওয়া হয়ে থাকে | এর কারণ যে কোনো পদার্থের গ্যাসীয় রূপকে যখন যথেষ্ট পরিমানে শক্তি বা তাপমাত্রা প্রদান করা হয়, তখন সে প্লাজ্মায় রুপান্তরিত হয় | এই অবস্থায় গ্যাসীয় পদার্থটির পরমাণুর ইলেক্ট্রনগুলি মুক্ত হয়ে পড়ে যার ফলে 

অবশিষ্ট পরমাণু একটি ‘পজিটিভ চার্জ’ ধারণ করে ও তাকে তখন ‘পজিটিভ আয়ন’ বলা হয়; এই পজিটিভ আয়ন ও ইলেক্ট্রনের সমষ্টিকেই আমরা বলি ‘প্লাজমা’ | উল্লেখ্য, সব আগুনই প্লাজমা না। তাপমাত্রা এবং পদার্থটি কতটা আয়নাইজড হয়েছে সেটার ওপর নির্ভর করে তাকে প্লাজমা বলা যাবে নাকি না।তাপমাত্রা  ৩০০০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড এর নীচে হলে তাকে প্লাজমা বলা যায় না। 

অন্যভাবে বলতে গেলে, আগুন হল একটি রাসায়ণিক বিক্রিয়া,যাকে দহন বিক্রিয়া বলা হয় । এটি একটি তাপোৎপাদী বিক্রিয়া (Exothermic Reaction)। অর্থাৎ এই বিক্রিয়ায় তাপ উৎপন্ন হয়। দাহ্যবস্তু, অক্সিজেন বা অন্য কোন জারক পদার্থ ও তাপ এই তিনটি উপাদানের সমন্বয়ে যে বিক্রিয়ার সৃষ্টি হয় সাধারনতঃ তাকেই আগুন বলে। যে কোন একটি উপাদানের কমতি থাকলে আগুনের সৃষ্টি কখনোই হবেনা।

এই দহন বিক্রিয়া (Combustion Reaction) আবার দুই ধরনের হয়। যথা-

১) Complete Combustion এবং 

২) Incomplete Combustion 

যখন কোনো জ্বালানি পর্যাপ্ত অক্সিজেনের উপস্থিতিতে নির্দিষ্ট পরিমাণ তাপ পায় তখন যে রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে এবং শক্তি উৎপন্ন হয় তাকে বলা হয় complete combustion বা পূর্ণ দহন। এই Complete Combustion এর সময় যে শিখার সৃষ্টি হয় তাকে বলা হয় নির্ধুম অগ্নিশিখা বা ধোঁয়াহীন আগুন। কারণ এক্ষেত্রে কোন ধোঁয়া সৃষ্টি হয় না। গ্যাসবার্নারে ও মোমবাতির শিখার গোড়ায় এ ধরনের আগুন তৈরি হয়। 

আবার, পর্যাপ্ত অক্সিজেনের অনুপস্থিতিতে কিংবা যথেষ্ট পরিমাণ তাপ না পেলে যে রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে তাকে Incomplete Combustion  বা অপূর্ণ দহন বলে। Incomplete Combustion-এ কার্বন মনোক্সাইড ও অন্যান্য জটিল যৌগ উৎপন্ন হয়, এগুলো এবং অবশিষ্ট হাইড্রোকার্বনগুলো ধোঁয়া হিসেবে পরিচিত। মোমবাতির শিখার উপরের অংশে, কেরোসিন, পেট্রোল, ডিজেল, কাঠ ইত্যাদিতে এই ধরনের আগুন তৈরি হয়। 

যাইহোক আবার ফিরে আসি মূল আলোচনায়। এতোক্ষনে আমরা জেনে গেছি যে, আগুন আসলে একধরনের গ্যাসমিশ্রণের বিক্রিয়াকালীন অবস্থা যা স্বতঃস্ফূর্তভাবে বা তাপ প্রদানের ফলে সংগঠিত হয় এবং বিক্রিয়ার ফলে সেখান থেকে তাপ উৎপন্ন হয়। কাজেই আগুনকেও আমরা পদার্থ বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোন থেকে ভর-শক্তি বলতে পারি। 

সুতরাং কোন কিছু যদি আগুনের তৈরী হয়ে থাকে, তাহলে ম্যাক্স প্লাংকের সমীকরণ অনুযায়ী সেটার একটা ফ্রিকোয়েন্সী থাকবে, একটা তরঙ্গ দৈর্ঘ থাকবে, সেই তরঙ্গদৈর্ঘ্যের একটা রেঞ্জ বা সীমা থাকবে। 

যেমনঃ দৃশ্যমান, অবলোহিত ,  তড়িচ্চুম্বকীয়, অতিবেগুনী, মাইক্রোওয়েব ইত্যাদি বিকিরণের প্রতিটির ক্ষেত্রে তাদের আলাদা আলাদা ফ্রিকোয়েন্সি, তরঙ্গদৈর্ঘ্য ও নির্দিষ্ট পরিমাণ শক্তি রয়েছে। কেবল দৃশ্যমান আলো তথা বিকিরণ (বেগুনি, নীল, আসমানী, সবুজ, হলুধ, কমলা লাল) বাধে অন্যান্য বিকিরণ সমূহকে আমরা খালি চোখে দেখতে পারি না। 

তবে যতো ক্ষুদ্র তরঙ্গদৈর্ঘ্যের বা দুর্বল শক্তির বিকিরণই হোক না কেন আধুনিক উন্নত সেন্সর মেশিন  ও ডিটেক্টর গুলোতে বিজ্ঞানীরা সেটা অবশ্যই ধরতে পারেন। 

কিন্তু দুঃখের বিষয় আজ অবধি বিজ্ঞানীরা জিন/ভূত /প্রেতাত্মা নামক অতিপ্রাকৃতিক কোন কিছুর অস্তিত্ব খুঁজে পান নি। আসল কথা হল জিন,ভূত, প্রেতাত্মাদের  মতো অতিপ্রাকৃতিক কোন কিছু নিয়ে বিজ্ঞানীরা কাজ করেন না।  

বিভিন্ন ভুতুড়ে স্থানে ডিটেক্টর মেশিন গুলোতে যেসব রেডিয়েশন ধরা পরে সেগুলোকে অনেকে জিন ভুতের অস্তিত্বের প্রমাণ বলে চালানোর চেষ্টা করে। অথচ তাড়া জানেই না যে, ডিটেক্টরে ধরা পরা বিকিরণ গুলো আমাদের খুবই পরিচিত ও স্বাভাবিক। 

এই যেমন, ধরেন আপনি ভুতুড়ে স্থান নামে পরিচিত কোন এক প্রকান্ড ঝোপঝাড়ের নিকট গিয়ে যদি একটি ইলেকট্রনিক ফিল্ড ডিটেক্টর বা EMF মিটার স্থাপন করেন তাহলে দেখবেন সেখানে যন্ত্রটি অনেক সিগনাল দিচ্ছে। কিন্তু এই সিগনালগুলোকে যদি কেউ ভূত-প্রেত বা জিনের অস্তিত্ব বলে দাবি তাহলে এরচেয়ে বড় মুর্খতা আর হয় না। 

কারণ এই যন্ত্রটি বিজ্ঞানীরা ব্যবহার করেন বিভিন্ন ধরনের তড়িচ্চুম্বকীয়  তরঙ্গ শনাক্ত করার জন্য। আপনার পরিক্ষনীয় স্থানের আশেপাশে বিভিন্ন উৎস থেকে (যেমনঃ বজ্রপাত বা পৃথিবীর চৌম্বকীয় ক্ষেত্র থেকে সৃষ্ট চার্জসমূহ, এক্স-রে, টিভি অ্যান্টেনা, বৈদ্যুতিক ওয়্যারিং, পাওয়ার লাইন, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম

 ইত্যাদি) এই তরঙ্গের সৃষ্টি হতে পারে যা আপনার সেট করা সেন্সর বা ডিটেক্টরে ধরা পরে। নীচে আপনাদের জানার সুবিধার্থে  কয়েকটি ডিটেক্টরের নাম উল্লেখ করলাম। এই যন্ত্রগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আপনারা গোগলে খুঁজুন। 

১)  ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ফিল্ড  ডিটেক্টর বা EMF মিটার

২) ইলেকট্রনিক ভয়েস ফেনোমেনা বা EVP

৩) এক্সটার্নাল থারমোমিটার

৪) ডিজিটাল ইনফ্রারেড ক্যামেরা

৫) আল্ট্রাভায়োলেট লাইট ইত্যাদি। 

আবার ফিরে আসি জিন প্রসঙ্গে। হাদিস থেকে আমরা জানতে পেরেছি যে,জিনেরা মানুষের মতো পানাহার, যোনক্রিয়া ও অন্যান্য প্রাকৃতিক প্রয়োজন পূরণ করতে পার  এবং তাদের শ্রবণশক্তি আছে। তারা মানুষের ফেলে দেয়া হাড়-হাড্ডি খেয়ে বেঁচে থাকে। তাহলে মুমিন ভাই বোন ও ইসলামিক স্কলারদের নিকট আমার কয়েকটি প্রশ্ন। 

১) জিনদের ও কি মানুষের মতো পরিপাকতন্ত্র আছে ? না থাকলে তারা হাড়-হাড্ডি খেয়ে হজম করে কিভাবে? 

২) জিনদের কি শ্রবণঅঙ্গ আছে? না থাকলে তারা শ্রবণ করে কিভাবে ? 

৩) বলা হয়েছে জিনদের প্রকৃত আকৃতি মানবচোখে অবলোকনযোগ্য, তাহলে আমরা তাদেরকে দেখতে পাই না কেন? 

৪) জিনদের কি আমাদের মতো জনন অঙ্গ আছে?  না থাকলে তারা যোন কর্ম ও বংশবিস্তার করে কিভাবে ? 

৫) বলা হয়েছে জিনরা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি ও নিজেদের মধ্যে রক্তপাত ঘটায়। জিনদের দেহ তো আমাদের মতো

রক্তমাংস দিয়ে তৈরি না, তাহলে তারা রক্তপাত ঘটায় কি করে? 

৬) পৃথিবীতে আদমকে পাঠানোর আগে জিনদের খাবার কি ছিলো ?  তখন তো আর আমরা হাড়-হাড্ডি, উচ্ছিস্ট, গোবড় এসব ফেলে রাখতাম না।   

৭) আমরা জানি আলো একধরনের শক্তি, আবার আগুনও একধরনের শক্তি। আগুন জ্বালানোর সময় তাপ ও আলো পাওয়া যায়। আবার আলোর সাহায্যেও আগুন ধরানো যায়। অর্থাৎ দুটোই একই জিনিস। তাহলে "ফেরেশতারা আলোর তৈরী এবং জিনেরা আগুনের তৈরি " এই কথার কোন বিশেষত্ব থাকলো?  

আশা করি এর একটি গ্রহনযোগ্য  উত্তর আপনারা আমাকে দিবেন।

আপনি কি মুক্তবুদ্ধির চর্চা করতে চান? -
প্রিন্স ফার্দিনান্দ
Nov. 21, 2024 | যুক্তিবাদ | views:282 | likes:0 | share: 0 | comments:0

ওকে ফাইন, হে নবীন পথিক৷ মুক্তচিন্তার জগতে আপনাকে স্বাগতম। শুরুতেই বলে নিচ্ছি মুক্তবুদ্ধির চর্চা করতে হলে অর্থাৎ মুক্তচিন্তক বা মুক্তমনা হতে হলে আপনাকে অবশ্যই সিস্টেমের বাহিরে গিয়ে চিন্তা করতে হবে। মুক্তচিন্তা মুক্তমনা  মানেই হল আপনার চিন্তার জগত, আপনার কল্পনা, আপনার ধ্যান-জ্ঞান সবকিছুই হবে মুক্ত বিহঙ্গের মতো। বদ্ধ সিস্টেমের ভেতরে থেকে এটা সম্ভব নয়। 

চলেন বিষয়টি নিয়ে সায়েন্স ও ফিলোসোফির আলোকে একটু আলোচনা করি। 

বিজ্ঞানের আলোকে আমরা জানি যে, ইউনিভার্সের কোন কিছুই সুশৃঙ্খলভাবে চলছে না। এখানের সবকিছুই বিশৃঙ্খল। তবে এই বিশৃঙ্খল জগতের সকল পদার্থ ও শক্তির প্রকৃতি  ব্যাখ্যা করা যায় যেসব বৈজ্ঞানিক সূত্র দিয়ে তা কখনো পরিবর্তন হবে না। এই যেমন শক্তির নিত্যতা সূত্র, থার্মোডাইনামিক্সের 

সূত্রসমূহ এসব কখনও পরিবর্তন হবে না। এই সূত্রসমূহ যেকোনো সিস্টেমের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। এমন কোন সিস্টেম বা ব্যবস্থা খুঁজে পাওয়া যাবে না যেখানে এই ইউনিভার্সাল সূত্রসমূহের ব্যত্যয় ঘটবে। এই সিস্টেম হতে পারে  আমাদের পুরো মহাবিশ্ব কিংবা একটি নক্ষত্র অথবা আমাদের পৃথিবী বা অন্য কোন গ্রহ। আবার এই সিস্টেম হতে পারে আমাদের পৃথিবীর অন্তর্গত যেকোন কিছু, পৃথিবীর সাগর মহাসাগর, নদ-নদী, খাল, বিল,পাহাড় পর্বত,বাতাস ইত্যাদি। 


আপনার খাবার টেবিলে রাখা এক গ্লাস পানি, চুলোয় বসানো গরম পানিভর্তি পাতিল, পার্টিতে  কিনে আনা এক বোতল মদ, কিংবা কোল্ড ড্রিংকস এর ক্যান সবই একেকটা সিস্টেমের আওতাধীন।

এতো গেল শুধু ম্যাক্রো লেভেলের উদাহরণ। এবার সিস্টেমের কিছু মাইক্রো লেভেলের উদাহরণ দেখে নেয়া যাক। পদার্থকে ভাঙলে যে অণু পরমাণু পাওয়া যায় সেগুলো ও একটা সিস্টেম। আবার পরমাণুকে আরও ভাঙতে থাকলে যে ইলেকট্রন, প্রোটন, নিউট্রন,ও অন্যান্য Particles পাওয়া যায় সেগুলোও  একটা সিস্টেমের অন্তর্ভুক্ত। আবার আরেকটু ভিন্নভাবে চিন্তা করলে পৃথিবীর বিভিন্ন ধর্ম ও সমাজব্যবস্থা, রাস্ট্র, সরকার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান -মসজিদ,মন্দির,গীর্জা,প্যাগোডা, বিভিন্ন শিল্পকারখানা, যানবাহন, ক্রীড়া ও চিত্রজগত ইত্যাদির সবকিছুই কোন না সিস্টেমের অধীন। কাজেই এক কথায় বলা যায় ইউনিভার্সের সবকিছুই একটা সিস্টেমের আওতাধীন।

 এখন আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যে, সিস্টেম আসলে কি?  সিস্টেমের সংজ্ঞাই বা কি? ওকে ফাইন, উত্তরটা আমি জানিয়ে দিচ্ছি। 

সাধারণ ভাষায় বলতে গেলে  “সিস্টেম হলো এমন একটি সজ্জিত  নিয়ম বা পদ্ধতি বা গঠনতন্ত্র বা বস্তুর সন্নিবেশ যা একটি নির্দিষ্ট কৌশল বা পরস্পর আন্তঃসংযুক্ত নেটওয়ার্ক এর অংশ হিসেবে কাজ করে।  যেমনঃ রাষ্ট্রীয় শিক্ষাব্যবস্থা, রাষ্ট্রীয় রেলওয়ে সিস্টেম, মোবাইল নেটওয়ার্ক সিস্টেম, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সিস্টেম বা ইন্টারনেট, ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান ইত্যাদি আবার পদার্থ বিজ্ঞানের ভাষায় সিস্টেমকে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে এভাবে -

পরীক্ষা নীরিক্ষা করার সময় জড়জগতের যে অংশ বিবেচনা করা হয় তাকে সিস্টেম বলে। এই সিস্টেম ৩ ধরনের হতে পারে। যথা- বদ্ধ সিস্টেম, মুক্ত সিস্টেম ও বিচ্ছিন্ন সিস্টেম। মুক্ত সিস্টেমের ক্ষেত্রে পরিবেশের সাথে পদার্থ ও শক্তির বিনিময় হয়। যেমন, গরম পানিযুক্ত উন্মুক্ত চায়ের কেটলি বা এক কাপ গরম চা বা কফি হল মুক্ত সিস্টেমের উদাহরণ। আবার বদ্ধ সিস্টেমের ক্ষেত্রে পরিবেশের সাথে শুধুমাত্র শক্তির বিনিময় হয় কিন্তু পদার্থ বা ভরের বিনিময় হয় না। যেমন, ঢাকনা  দিয়ে আটকানো গরম পানি ধারণ কারী চায়ের কেটলি। অন্যদিকে বিচ্ছিন্ন সিস্টেমের ক্ষেত্রে পরিবেশের সাথে পদার্থ ও শক্তি কোনটারই বিনিময় হয় না। প্রকৃতপক্ষে আমাদের ইউনিভার্সের কোথাও কোন বিচ্ছিন্ন সিস্টেম বলে কিছুই নেই। এটা জাস্ট একটা কাল্পনিক ধারণা। 

যাইহোক, এসব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করতে গেলে অনেক বড় হয়ে যাবে। কিন্তু আমার এই আলোচনায় আমি জাস্ট মূল থিমের আলোকে আপনাকে বুঝানোর চেষ্টা করছি। আশা করছি এতক্ষণে আপনি সিস্টেম সম্পর্কে অনেকখানি অবগত হয়েছেন। আপনি যদি সিস্টেম সম্পর্কে বুঝেই থাকেন তাহলে আপনাকে এখন বেশ কিছু মৌলিক প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে। প্রশ্নগুলো আসতে পারে কোন অল্পশিক্ষিত চতুর ধূর্ত মোল্লার কাছ থেকে। ধূর্ত মোল্লা আপনাকে বলতে পারে যে, "পুরো মহাবিশ্বই যেহেতু একটা সিস্টেম, তাহলে এই সিস্টেম তৈরি করলো কে? এই সিস্টেম নিশ্চয়  'ভুগিভুগি' তৈরি করেছেন এবং তিনিই ইহা চালাচ্ছেন তার নিজের খেয়ালে।”

ধূর্ত মোল্লার এমন প্রশ্ন ও উত্তর শুনে যদি আপনি এখানেই থেমে যান তাহলে আপনি কোনদিন গন্ডীর বাহিরে চিন্তা করতে পারবেন না। আপনি জগতের সৃষ্টি রহস্যের আগামাথা কিছুই জানতে পারবেন না। আপনার পক্ষে কখনো  মুক্তচিন্তক ও প্রগতিশীল হওয়া সম্ভব না। কাজেই আপনাকে থেমে গেলে চলবে না। ওই পয়েন্টটাই আপনার মুক্তচিন্তক হয়ে উঠার পেছনে প্লাস পয়েন্ট হিসেবে কাজ করবে যদি আপনি তাকে পালটা প্রশ্নের পর প্রশ্ন করতে পারেন।

 

আপনি তাকে প্রশ্ন ছুড়ে মারুন যে পৃথিবীতে ৪০০০+ ধর্ম আছে। কোন ধর্মের কোন 'ভুগিভুগি' এই সিস্টেম তৈরি করেছেন?

এই সিস্টেম তিনি কেন তৈরি করেছেন, কিভাবে তৈরি করেছেন? ভুগিভুগির তৈরি করা সিস্টেমে কোন শৃঙ্খলা নেই কেন? কেন পৃথিবীতে এক প্রাণী খাচ্ছে আরেক প্রাণীকে? 

কেন মহাবিশ্বে সবসময় মহা কুরুক্ষেত্র লেগেই আছে? কেন কোন কিছুই সুক্ষ্ণভাবে চলছে না? কেন  নক্ষত্রে নক্ষত্রে ঠোকাঠুকি লাগে? কেন  নক্ষত্র  collapsed  হয়ে ব্ল্যাক হোলে পরিণত  হয়ে সে Constellation এর সকল তারাগুলোকে গিলে ফেলে  

কিংবা Neutron নক্ষত্র হয়ে মারাত্মক শক্তিশালী  Gamma ray বিকিরণ করে আশেপাশের সব তারাকে ধংস করে দেয়? কেন বড় Galaxy ছোটো  Glaxy কে গিলে খেয়ে আপন আকৃতিকে

বিশাল করে ফেলে? কেন মহাবিশ্বে এই অহরহ তান্ডবের লীলাখেলা চলছেই যার কোন নিয়ম কানুন নাই? 

 Why there is no plan or rule in the Cosmos? কেন যে যার খেয়ালে চলছে, ধ্বংস হচ্ছে আবার নতুন রূপে আবির্ভাব হচ্ছে? এভাবে প্রশ্নের পর প্রশ্ন করতে পারলে আপনি অতি দ্রুতই চিন্তায় ও মননে হাজারগুণে এগিয়ে যাবেন। 

পরিশেষে বলি মুক্ত বুদ্ধির চর্চা করতে হলে আপনাকে আগে সিস্টেমের বাহিরে আসতে হবে। সিস্টেমের ভেতরে থেকে আপনি কখনোই সিস্টেমকে জানতে বা বুঝতে পারবেন না। সিস্টেমকে ভালোভাবে বুঝতে হলে আপনাকে অবশ্যই সিস্টেমের বাহিরে গিয়ে সিস্টেমকে observe করতে হবে। একটা ছোট উদাহরণ দিয়ে বুঝাই-

আমাদের দেশে কওমি মাদ্রাসায় পড়াশোনা শিক্ষার্থীদের কথাই ধরুন। এই কাওমি মাদ্রাসা হল একটা সিস্টেম। এই সিস্টেমের ভেতরে যেসব ছেলেমেয়ে পড়াশোনা করে তারা সাধারণত বাহিরের জগত উন্নত বিশ্বের শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও আধুনিকতা সম্পর্কে অবগত থাকে না। তারা সিস্টেমের আওতাধীন হুজুরদের মুখে যা শুনে সেটাকেই মনে করে পুরো পৃথিবী। তারা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পর্কেও অনেক পিছিয়ে থাকে। এর কারণ কওমি মাদ্রাসার সিস্টেম অনুযায়ী সেখানে তাদেরকে সাধারণত ধর্মীয় বই পুস্তকই বেশি বেশি পড়ানো হয়। তাদেরকে বিখ্যাত লেখকদের বই পড়ার সুযোগ দেয়া হয় না। উন্নত বিশ্বের কোথায় কি হচ্ছে সে সম্পর্কে তারা খুব একটা ওয়াকিবহাল থাকে না। কাজেই কওমি সিস্টেমের ভেতরে থেকে পড়াশোনা করা একজন শিক্ষার্থীর পক্ষে মুক্তচিন্তক হয়ে উঠা খুবই কম সম্ভব।

আমাদের কথা


এই দুর্নিবার সময়েও লেখনী চালিয়ে যাওয়ার মত ধীশক্তি ধরে রেখে মুক্তচিন্তকরা নিরন্তর লিখে চলেছেন। তাঁদের লেখাগুলি সংকলিত করে প্রকাশিত হয়ে চলেছে চেতনার অন্বেষণে পত্রিকা। যা দুই বাংলার পাঠকদের কাছে দ্রুত সমাদৃত হয়। এই পথ চলার একটি ধাপে এসে অন্বেষণ পাবলিশার্স পথ চলা শুরু করেছে মূলত মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনস্ক বইগুলিকে পাঠকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে। আমাদের কথা বলতে লেখক, পাঠক সবাই মিলিয়েই আমরা।

ওয়েবসাইট প্রসঙ্গে


এটি মূলত বিজ্ঞানমনস্কতা, যুক্তিবাদ চর্চা এবং বইপত্রের প্ল্যাটফর্ম। এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যুক্তিবাদীদের লেখার চর্চাকে অনুপ্ররণা যোগাবে। লগইন করে আপনিও লিখতে পারবেন, ওয়েবসাইটটি সমস্ত বিজ্ঞানমনস্ক, যুক্তিবাদীদের উদ্দেশ্যে নির্মিত।

যোগাযোগ


Email: yuktibadira@gmail.com

WhatsApp: +91-9433794-113


Website visit count:
86930